বৃহস্পতিবার, ২৬ ডিসেম্বর ২০২৪, ০২:৪১ পূর্বাহ্ন
মুন্না শরীফ- মাদারীপুর জেলা প্রতিনিধিঃ
জেলা প্রশাসন আয়োজিত ১২দিনের অনুষ্ঠানিকতা শেষে ‘মাদারীপুর উৎসব’-এর শুরু হয় মাদারীপুর জেলা সদরে এবং বর্ণিল পর্দা নামলো শিবচরে মঙ্গলবার ৩১শে জানুয়ারি। এর আগে গত ২০শে জানুয়ারি বিকেল ৫টায় মাদারীপুর আছমত আলী খান স্টেডিয়ামে ১২ দিন ব্যাপী ‘মাদারীপুর উৎসব ২০২৩’ ও মাসব্যাপী বাণিজ্যমেলার উদ্বোধন করেন জাতীয় সংসদের স্পিকার ডঃ শিরীন শারমীন চৌধুরী। মাদারীপুরের জেলা প্রশাসক ডঃ রহিমা খাতুন-এর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন- জাতীয় সংসদের চীফ হুইপ নূর-ই আলম চৌধুরী এমপি, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য সাবেক নৌ মন্ত্রী বীর মুক্তিযোদ্ধা শাজাহান খান এমপি, মাদারীপুর-৩ আসনের এমপি বীর মুক্তিযোদ্ধা ডঃ আবদুস সোবাহান গোলাপ, টাঙ্গাইল-২ আসনের এমপি তানভীর হাসান ছোট মনি, জাতীয় সংসদের সিনিয়র সচিব কে,এম আবদুস সালাম, সংরক্ষিত মহিলা আসনের এমপি অধ্যাপক তাহমিনা বেগম, মাদারীপুর জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মোঃ শাহাবুদ্দিন আহমেদ মোল্লা।
অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন- মাদারীপুর জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মুনির চৌধুরী, মাদারীপুর সদর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান এড. ওবাইদুর রহমান খান, মাদারীপুর পৌরসভার মেয়র খালিদ হোসেন ইয়াদ। ১২দিনের সকল অনুষ্ঠানে জেলা প্রশাসন ও উপজেলা প্রশাসনের পদস্থ কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
উদ্বোধন থেকে শুরু করে সমাপনী পর্যন্ত দেশ বরেণ্য সব গুনিজনের অংশগ্রহণে জমকালো সকল আয়োজন ছিলো মনোমুগ্ধকর ও আকর্ষনীয়। জেলার ইতিহাস, ঐতিহ্য ও শিল্প-সংস্কৃতিকে সারাদেশে পরিচয় করাই ছিলো ‘মাদারীপুর উৎসব’-এর মূল উদ্দেশ্য। একই দিন সন্ধা ৬টায় একুশে পদকপ্রাপ্ত প্রখ্যাত চিত্রশিল্পী কাজী আনোয়ার হোসেন আন্তর্জাতিক চারুকলা প্রদর্শনী শুরু হয় পৌর অডিটরিয়ামে।
মাদারীপুরে এই ধরণের আয়োজন এই প্রথম হওয়ায় প্রদর্শনীতে প্রতিদিনই দর্শনার্থীদের ভীড় ছিল চোখে পড়ার মতো। প্রতিদিন দুপুরের পর থেকে রাত পর্যন্ত ছোট ছোট ছেলে মেয়েদের নিয়ে চারুকলা দেখতে আসেন অভিভাবকরা। এই প্রদর্শনিতে দেশ-বিদেশের ২০০টি ছবি স্থান পায়। ১২ দিনের চারুকলা প্রর্দশনী চলে ৩১শে জানুয়ারি পর্যন্ত। চারুকলা প্রদর্শনীর উদ্বোধন করেন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য, সাবেক নৌপরিবহন মন্ত্রী বীর মুক্তিযোদ্ধা শাজাহান খান এমপি। আন্তর্জাতিক চারুকলা প্রদর্শনী এই মুক্তিযোদ্ধা অডিটরিয়াম ছাড়াও জেলা শিল্পকলা একাডেমির মিলনায়তনসহ ৩টি গ্যালারিতে ২০০ জন শিল্পীর ২৩০টি শিল্পকর্ম প্রদর্শিত হয়। এর মধ্যে ৫০ জন বিদেশি শিল্পীর চিত্রকর্ম ছিলো।
কয়েকজন দেশি শিল্পীর ভাষ্কর্যও প্রদর্শিতও হয়েছে। কাজী আনোয়ার হোসেনের আঁকা ১৫টি বাছাই করা চিত্রকর্ম রাখা হয় কয়েকটি গ্যালারিতে।
জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে- জেলা সদরসহ ৫ উপজেলায় গৃহীত নানা কর্মসূচি পালনসহ ১২দিন ব্যাপী ‘মাদারীপুর উৎসব ২০২৩’-এর সমাপনী দিন মঙ্গলবার (৩১ জানুয়ারি) শিবচরে স্মার্ট শিবচর উদ্বোধন, এফ.আর খান উদ্যোক্তা সম্মেলন ও জব ফেয়ার ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের মধ্যদিয়ে শেষ হলো এবারের বর্ণিল আয়োজন।
উলেখযোগ্য কর্মসূচির মধ্যে ছিলো রবি ও সোমবার (২৯-৩০ জানুয়ারি) সংস্কৃতি মন্ত্রনালয় ও বাংলা একাডেমির সহায়তায় জেলা প্রশাসনের আয়োজনে জেলা শিল্পকলা একাডেমিতে সাহিত্য মেলা।
প্রধান অতিথি ছিলেন- দুদক কমিশনার ডঃ মোঃ মোজাম্মেল হক খান, মুখ্য আলোচক বাংলা একাডেমির সভাপতি বিশিষ্ট কথাসাহিত্যিক সেলিনা হোসেন।
বক্তব্য রাখেন- সংস্কৃতি মন্ত্রনালয়ের যুগ্মসচিব নাফরিজা শ্যামা, প্রধান বক্তা বাংলা একাডেমির উপপরিচালক ডঃ তপন বাগচী। সভাপতিত্ব করেন জেলা প্রশাসক ডঃ রহিমা খাতুন। নির্বাচিত ৩টি প্রবন্ধ পাঠ করেন প্রাবন্ধিক ইয়াকুব খান শিশির, প্রাবন্ধিক সুবল বিশ্বাস, প্রাবন্ধিক মাসুদ সুমন। দু‘দিনের কর্মসূচির মধ্যে ছিলো আলোচনা সভা, লেখক কর্মশালা, কবি কণ্ঠে কবিতা পাঠ, সংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে স্থানীয় লেখকদের মধ্য থেকে স্বরচিত কবিতা পাঠ করেন কবি বাবুল আশরাফ, কবি মিলন সব্যসাচী এবং কবি শিল্পী মাহমুদ।
“মাদারীপুর উৎসব ২০২৩” উপলক্ষে ১১দিন জেলা সদর, শিবচর, কালকিনি, রাজৈর, ডাসারসহ ৫ উপজেলায় আলাদাভাবে উৎসবের বিভিন্ন পর্ব অনুষ্ঠিত হয়। এর মধ্যে ছিলো গোল্ডকাপ দাবা, কাবাডি টেনিস, ক্রিকেট, হ্যান্ডবল ও ব্যাডমিন্টন টুর্নামেন্ট, পিঠা উৎসব, ম্যারাথন, মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক অনুষ্ঠান ‘প্রজন্মকে জানি’, সাহিত্য সম্মেলনসহ ২৬টির বেশি অনুষ্ঠান হয়।
জাকজমকপূর্ণ আয়োজনে মঙ্গলবার দুপুরে স্মার্ট শিবচর, উদ্যোক্তা সম্মেলন ও জব ফেয়ার উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প বিনিয়োগ উপদেষ্টা সালমান এফ, রহমান। তিনি বলেন, ‘স্মার্ট বাংলাদেশে স্মার্ট বিনিয়োগকারী সৃষ্টি করতে হবে। তাহলেই দেশের অর্থনীতির সামগ্রিক উন্নয়ন হবে।’ এ সময় মাদারীপুর জেলার শিবচর উপজেলায় স্মার্ট কার্যক্রম শুরু ও উপজেলায় স্থাপিত ৮৮০টি সিটি ক্যামেরার উদ্বোধন করেন।
তিনি আরও বলেন- চারটি বিষয়কে প্রাধান্য দিয়ে স্মার্ট বাংলাদেশের দিকে এগুচ্ছে। তা হলো স্মার্ট শাসন ব্যবস্থা, স্মার্ট কমিউনিটি, স্মার্ট ইকোনমি ও স্মার্ট সিটিজেন। এর মধ্যে সবচে গুরুত্বপূর্ণ হলো স্মার্ট অর্থনীতি। তাই বাংলাদেশের মধ্যে শিবচর উপজেলায় স্মার্ট কার্যক্রম শুরুর মধ্য দিয়ে স্মার্ট বিনিয়োগ সৃষ্টি করতে হবে। এজন্যে আমি অনুরোধ করবো, স্মার্ট বিনিয়োগকারীরা স্মার্ট শিবচরে বিনিয়োগ করুক। আমি এব্যাপারে সার্বিক সহযোগিতা করবো।
শিবচর উপজেলার উন্নয়ন কার্যক্রমকে তুলে ধরে সালমান এফ রহমান বলেন- আমাকে শিবচর উপজেলার স্মার্ট কার্যক্রমের উদ্বোধন করতে আনা হয়েছে, আমি মূলত যা দেখলাম, তাকে এখানের সাংসদ নূর-ই-আলম চৌধুরীকে বলবো আমার এলাকায় গিয়ে এমন কার্যক্রমে শুরু করে দেয়ার। একটা উপজেলায় গুরুত্বপূর্ণ হাট-বাজার, মার্কেট, সরকারী অফিসে ৮৮০টি সিসি ক্যামেরা স্থাপনের মাধ্যমে দুর্নীত কমানো যাবে।
এরপর সালমান এফ রহমান চিত্রশিল্পী কাজী আনোয়ার হোসন ফাউন্ডেশনের উদ্যোগে চিত্রকর্ম প্রদশর্ণী ঘুরে দেখেন। এর আগে তিনি এফ আর খান উদ্যোক্তা সম্মেলন ও জব ফেয়ারের উদ্বোধন করেন। সকাল ১০টায় তিনি শেখ হাসিনা তাতপল্লী এলাকার উন্নয়ন কাজ পরিদর্শণ করেন।
এ সময় উপস্থিত ছিলেন- জাতীয় সংসদের চীফ হুইপ নূর-ই আলম চৌধুরী এমপি, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক এমপি, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য বীর মুক্তিযোদ্ধা শাজাহান খান এমপি, কাজী নাবিল আহমেদ এমপি, নাহিদ খান এমপি, হাইটেক পার্কের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ডঃ বিকর্ণ কুমার ঘোষ, প্রকল্প পরিচালক সৈয়দ জহুরুল ইসলাম, মাদারীপুর জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মুনির চৌধুরী, জেলা প্রশাসক ডঃ রহিমা খাতুন, পুলিশ সুপার মাসুদ আলম, উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোঃ রাজিবুল ইসলামসহ স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতৃবৃন্দ। সন্ধায় শিবচর হাতির বাগান মাঠে সমাপনী অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। সন্ধা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে ১২দিন ব্যাপী ‘মাদারীপুর উৎসব ২০২৩’-এর সমাপ্তি ঘটে।